দুদকের একজন ও পুলিশের একজন উদ্ধর্তন কর্মকর্তার ঘুষ লেনদেন বিষয়ক তদন্ত কার্যক্রম চালাতে গিয়ে দুইজন সাংবাদিককে চিঠি লিখে এখন আলোচনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১৮ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘তুলে নিয়ে বিয়ে করলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার’ শিরোনামে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিষয়টি তোলপাড় সৃষ্টি করে। ওই ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তর ছাড়াও দুদক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত চলার সময় পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। অনুসন্ধান শেষে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। কিন্তু, খন্দকার এনামুল বাছির তার (মিজান) কাছ থেকে রিপোর্ট পরিবর্তনের জন্য ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে দাবি করেন ডিআইজি মিজান। পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য পাচারের অভিযোগে তদন্ত কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে আরো তথ্য চেয়ে ‘আপত্তিকর’ ভাষার চিঠিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুদকের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ স্বাক্ষরিত দুই সাংবাদিককে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে। অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে। অবশ্য দুই সাংবাদিকের মধ্যে একজনের চিঠিতে ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে’ লাইনটি ছিল না। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ পাওয়ার পর ওই চিঠি দুটির বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে দুদক। দুই সাংবাদিককে ‘ফরমেটের’ বাইরে গিয়ে দুই ভাষায় কেনো চিঠি লেখা হলো, তার কারণ দর্শাতে দুদকের পরিচালক শেখ মো ফানাফিল্লাকে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে দুদক কর্তৃপক্ষ। এর আগে সাংবাদিকরাও দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
একজন সাংবাদিকের প্রতিবেদনের মাধ্যমে যা প্রকাশ পায়, তা সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা ও সম্পাদকীয় নীতি এবং পক্ষ-বিপক্ষের ভাবমূর্তি-অধিকার মেনেই প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত তথ্যের কোনো অস্পষ্টতা থাকলে বা সত্যতা যাচাইয়ে কোনো সমস্যা থাকলে তা দেশের প্রচলিত গণমাধ্যম আইন ও প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে সমাধানের সুযোগ আছে। দুর্নীতির মতো একটি বড় সমস্যা নিয়ে কাজ করা বিশেষায়িত একটি কমিশন সে পথ অনুসরণ করে তাদের তথ্য যাচাইয়ের পথ বেছে নিতে পারতো। কোনো সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজের মতো কোনো কর্মরত সাংবাদিককে আপত্তিকর ভাষায় চিঠি দিয়ে ডেকে নেয়া অনৈতিক বলে আমরা মনে করি।
সাংবাদিকের প্রতিবেদন ও প্রতিবেদনের তথ্যের মাধ্যমে কোনো ঘটনার নানা পরিক্রমা দুর্নীতিসহ যেকোনো বিষয়ের তদন্তকাজে বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সেই কাজকে আরো সহজ করে দেয়। দুদক ও পুলিশের ওই দু’জন কর্মকর্তার ঘুষ লেনদেন বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনও সেরকমই, ওই প্রতিবেদনের বাইরে নিশ্চয় এমন কোনো তথ্য বা সূত্র সাংবাদিকের কাছে ছিল না যা কিনা আপত্তিকর ভাষায় চিঠি দিয়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে দুদককে জানাতে হবে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দুদকের একজন পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গিয়েছে বলেই কি দুদক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করেছে?
দুর্নীতি প্রতিরোধে বিশেষায়িত একটি কমিশন হিসেবে দুদকের এক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি। দুদকে কর্মরতদের কাজে আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আশা করে জাতি, তা না হলে তারা কীভাবে অন্যের দুর্নীতি প্রতিরোধ করবে? আমাদের আশাবাদ, এই অনাকাঙ্খিত বিষয়টির দ্রুতই সমাধান হবে এবং দুদক তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব আরো সক্রিয়ভাবে পালন করবে।